স্টাফ রিপোর্টার:
কুষ্টিয়ায় গোল্ডেন লাইফ ইন্সুরেন্সে (গৃহ কল্যান) প্রকল্পে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে শত শত যুবককে পথে বসিয়ে বিলাস বহুল দিন কাটাচ্ছে ওই অফিসে উপ ব্যাবস্থাপনা পরিচালক রাজু আহাম্মেদ।
এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন ভুক্তভুগী জেলা প্রশাসক এবং কুষ্টিয়া মডেল থানায় অভিযোগ করার পরও কোন প্রতিকার পায়নি উল্টো থানায় অভিযোগের কথা জানতে পেরে উল্টো অভিযোগ কারীদের বিরুদ্ধে থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে পুলিশকে ম্যানেজ করে সেই অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিতে থাকে প্রতারক রাজু।
এমনকি ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মরত মহিলা কর্মী যারা প্রতিবাদ করেছে তাদের নামে অশ্লীল কথাবার্তা এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের কে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকী দিয়ে দাবিয়ে রাখে ওই কর্মকর্তা।
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের র্যাব গলির অপর পাশের একটি ভবনের ৩য় তলায় বিলাশবহুল অফিস। লেখাপড়ার কোন ঠিক না থাকলেও স্যুট প্যান্ট এবং টাই পড়ে যেকোন কর্পোরেট অফিসের বসের মতো চলাফেরা। প্রথমবার গেলে যে কেউ মনে করতে পারে বড় কোন কোম্পানীর অফিস। আর এই লেবাসে গ্রামের সহজ সরল বেকার ছেলে মেয়েদের ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা বেতনের চাকরি দেওয়ার নাম করে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা জামানত নিয়েছে রাজু আহাম্মেদ। প্রথম দিকে দুই একমাস কিছু টাকা দিলেও তার পর থেকে মাত্র ২ হাজার টাকা করে বেতন দিতে শুরু করলে প্রতিবাদ জানায় ভুক্তভুগীরা। আর তখন থেকেই প্রতিবাদ কারীদের বিরুদ্ধে হামলা মামলাসহ নানাবিধ নির্যাতন করতে থাকে গোল্ডেন লাইফ ইন্সুরেন্স এর ওই কর্মকর্তা।
বর্তমানে হামলা মামলার ভয়ে নিরাপত্তহীনতায় ভুগছে প্রতিবাদকারী শতাধিক যুবক যুবতী। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কুমারগাড়া এলাকার কনিজ ফাতেমা জানান, একই এলাকার বাসা বাসা হওয়ার কারনে, বর্তমানে গোল্ডেন লাইফে কর্মরত রাবেয়া নামের এক মহিলার সাথে আমার পরিচয় ছিলো। সেই সূত্র ধরে আমি বাপের বাড়িতে আসলেই রাবেয়া আমাকে ১৮ হাজার টাকা বেতন দিয়ে একটি চাকরি দেওয়ার কথা বলে। লোভনীয় বেতন হওয়ায় চাকরিতে যোগদানের জন্য মজমপুরের একটি অফিসে আসি। সেসময় আমাকে চাকরির জমানতের জন্য ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে বলে। যেহেতু চাকরির বেতন অনেক ভালো তাই কোন কিছু না ভেবে ৫০ হাজার টাকা জামানত হিসেবে দিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি।
কিন্তু মাস শেষে তাকে ধরিয়ে দেয়া মাত্র ২ হাজার টাকা। ১৮ হাজার টাকা বেতনের জায়গায় কেন দুই হাজার টাকা দেয়া হলো জানতে চাইলে সেখানকার কর্মকর্তা রাজু আহাম্মেদ বিভিন্ন তালবাহনা করতে থাকে। পরে প্রতারনার ব্যাপারটি বুঝতে পেরে কানিজ ফাতেমা তার জামানতের টাকা ফেরত চাইলে টাকা না দিয়ে তাকে বলা হয় তিনি সেই টাকা দিয়ে পলিসি করেছেন এবং আমানত হিসেবে জমা আছে বলে একটি পলিসির কাগজ হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। এনিয়ে প্রতিবাদ করায় কানিজ ফাতেমা এবং তার মাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয় প্রতারক রাজু। শুধু কানিজ ফাতেমা নয় মিরপুরের শাকিব, শহরের কালিশংকরপুরের তুষার, সাওতা এলাকার শাকিলসহ কুষ্টিয়ার সহজ সরল প্রায় শতাধিক বেকার যুবক এবং যুবতীকে চাকরি দেওয়ার নাম করে তাদের সাে প্রতারনা করা হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ প্রতিবাদ করলেই তার উপর বিভিন্ন ভাবে মানুষিক সামিিজক চাপ সহ মামলার হুমকি দেয় রাজু এবং তার সহযোগীরা।
এবিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায়, মিরপুর থানায় এবং কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ ও দিয়েছে ভুক্তভগী কয়েকজন যুবক।
এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রতারক রাজু তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করে বলেন, আমি কাউকে চাকরি দেই নাই। এখানে কাজ করতে হলে আগে নিজের পলিসি করতে হয়, তারাও করেছে। আমি কোন প্রতারনা করিনি। আগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাজ করা কালিন সময় অর্থিক কেলেংকারির কারনে রাজুর চাকরি চলে যায় । এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে রাজু আহাম্মেদ বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে এমন অভিযোগ আসতেই পারে।
বিষয়টি নিয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেনকে অবগত করলে তিনি বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। এই ধরনের প্রতারণা কারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
দেশতথ্য//এল//
Leave a Reply