দেশতথ্য ডেস্ক:
কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলায় মাঠজুড়ে ইরি (বোরো) ধানের আবাদের ধুম পড়েছে। এখন বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে চলছে বীজতলা থেকে চারা তোলা, চারা লাগানো ও জমি প্রস্তুতের কাজ। কৃষকরা কাক ডাকা ভোরে শীত উপেক্ষা করে মাঠে ছুটছেন। এবারের বোরো মৌসুমে জেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমি। গত বছর এ জেলায় বোরো আবাদ হয়েছিল ৩৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে।
বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা জানান, গত বছর জমির লিজ খরচ, সার, কীটনাশকের মূল্য বেশি এবং ধানের কম হওয়ায় হতাশ হয়েছিলেন কৃষক। এবার সে হতাশা কাটিয়ে মাঠে নামলেও ধানের ভালো দাম পাওয়ার ব্যাপারে শঙ্কা রয়েছে। তাদের দাবি ধানের ন্যায্যমূল্য যেন তারা পায়। এ বছর ন্যায্যমূল্য পেলে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে ভালো ফলন ঘরে তুলবেন এবং লাভবান হবেন। সে প্রত্যাশায় বোরো নিয়ে এত ব্যস্ততা কুষ্টিয়ার কৃষকদের।
বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে চলছে বোরো রোপণের ব্যস্ততা। কোথাও কোথাও বীজতলা থেকে চারা তুলে তৈরিকৃত জমিতে চারা রোপণ করছেন। আবার কেউ জমিতে পানি আটকানোর জন্য জমির আইল (সীমানা প্রাচীর) শক্ত করে বাঁধছেন। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা, কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে জলসেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে কোথাও চলছে জমি চাষার কাজ। ফলে তীব্র শীতেও ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকদের দম ফেলার সময় নেই। কুষ্টিয়ার মাঠে মাঠে চলছে বোরো ধানের আবাদের ধুম।
কুষ্টিয়া কৃষি অফিস জানিয়েছেন, কুষ্টিয়া জেলার ছয় উপজেলায় ৩৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ১৩ হাজার ৭৫৬ হেক্টর, খোকসা উপজেলায় এক হাজার ২২৫ হেক্টর, কুমারখালী উপজেলায় ৪ হাজার ১৫৫ হেক্টর, মিরপুর উপজেলায় ৮ হাজার ৪৫৬ হেক্টর, ভেড়ামারা উপজেলায় এক হাজার ৫৫৫ হেক্টর এবং দৌলতপুর উপজেলায় ৪ হাজার ১৩৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের কৃষক খাদেমুল ইসলাম বলেন, আমি এই বছর ছয় বিঘা জমিতে ধান লাগাবো। এজন্য জমির প্রস্তুতের কাজ করছি। প্রায় দশ কাঠা জমিতে বোরো ধানের চারা দিয়েছি। এই সপ্তাহের মধ্যেই চারা রোপণ করবো।
একই এলাকার কৃষক মহিদুল ইসলাম জানান, আজ ধানের চারা রোপন করছি। এই বছর তিন বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করব। এর আগে এই জমিতে সবজির (পালংশাক, লালশাক ও ফুলকপি) চাষ করেছিলাম।
সদর উপজেলার বাড়াদি এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আবাদ করতে গিয়ে খরচ বর্তমানে বেশি। সার কীটনাশক এর দাম বেশি। আমি এবছর দুই বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। শুধু চারা রোপণ করতে তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যা অন্যবারের চেয়ে প্রায় এক হাজার বেশি। তাছাড়া সার ও কীটনাশকের দামও বেশি।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিশাকুন্ডি ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের কৃষক জাহিদ আলী বলেন, গতবছর ফলন ভালো হলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছিলাম। তাই লোকসান কাটিয়ে উঠার আশা নিয়ে এবারও বোরো ধানের আবাদ শুরু করেছি। গত দুই দিন আগে চারা রোপণ করা হয়েছে। সরকার যদি ভালো দামের ব্যবস্থা করে, তাহলে লাভবান হবো ইনশাআল্লাহ।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, কৃষকরা এখন বোরো আবাদের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর বোরো চারার তেমন কোনো সংকট নেই। চলতি মৌসুমে সেচ সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনসহ অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গত মৌসুমে জেলা ৩৩ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছিল। এবার ৩৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশতথ্য//এল//
Leave a Reply