কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার পদ্মা নদীর জয়বাংলা নামক এলাকায় চ্যানেল চার্জের নামে দাবিকৃত ১লাখ টাকা চাঁদার টাকা না পেয়ে ফেরিওয়ালাদের নৌকায় হামলা, মারধর, ডাকাতি ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে দূর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় মাদারিপুরের কালকিনি উপজেলা থেকে ছেড়ে আসা কুষ্টিয়াগামী প্লাস্টিক জার বোঝায় ফেরিওয়ালাদের ওই নৌকাটি ঘটনাস্থলে পৌছালে দুর্বৃত্তরা নৌকাটি জিম্মি করে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী ফেরিওয়ালাদের। তবে এবিষয়ে কুমারখালী বা কুষ্টিয়া মডেল থানায় কোন লিখিত অভিযোগ নেই দাবি পুলিশের।
মারধরের ঘটনায় গুরুতর আহত ফেরিওয়ালারা হলেন- আলামিন(৩২), বাকাউল(৩০), শরিফুল(২২), জয়নাল(৪২), হাবিব(২২), বারেক(৪৫), হারুণ(৪৫), অলিল(৪০) ও মাহবুব(৩০)। এদের সকলের বাড়ি কালকিনি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
নৌকার মাঝি কালকিনি উপজেলার সাদিপুর গ্রামের খালেক মাতব্বরের ছেলে আলামিন (৩২)র অভিযোগ, ঘটনাস্থলে নৌকাটি পৌছানোর পর দুর থেকে একটি নৌকা আমাদের থামতে বলে, পরে দূর্বৃত্তদের ওই নৌকাটি আমার নৌাকার কাছে এসে প্রথমে বি আই ডব্লিউ টি এর চ্যানেল চার্জের খাজনার কথা বলে ৫হাজার টাকা চাঁদাদাবি করে। আমি খাজনার টাকার রশিদ চাওয়ায় ওরা মোবাইল করে আরও দুই/তিনটা নৌকায় লোক জড়ো করে পিস্তল, হাসুয়া, হাতুরি, রড, হকিষ্টিক, লাঠিসহ বিভিন্ন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমাদের জিম্মি করে মারধর শুরু করে। ওরা আমাদের নৌকাটি নদীর মধ্যে দুর্গম চরে নিয়ে ভেড়ায়। সেখানে আমাদের নোকায় থাকা ১০জনকেই বেদম মারধর করে। নৌকায় যার কাছে যা টাকা পয়সা, মোবাইল, গ্যাসের সিলিন্ডার ও চুলা, সোলার চার্জের জিনিসপত্রসহ সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে ওদের একটি নৌকায় তুলে চলে যায়। বাঁকি দুই নৌকার লোকজন আমাদের মারধর করতে থাকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
কালকিনি উপজেলার চর কাশেমপুর গ্রামের বাদশা সর্দারের ছেলে গুরুতর আহত ফেরিওয়ালা বাকাউল (৩০)র অভিযোগ, ওরা আমার মোবাইল ফোন থেকে আমার বাড়িতে কল করে বিকাশের মাধ্যমে ১লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে; না দিলে নৌকা ডুবিয়ে দেয়াসহ আমাদের সবাইকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হবে। আমার বাড়িতে এই সংবাদ পাওয়ার পর স্থানীয় নেতাদের বিষয়টি অবগত করে সাহায্য চায়। পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ ভাইয়ের সাথে এবং এলাকার এক বড় ভাই ঢাকায় কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মাধ্যমে সাহায্য চাইলে উনারা যোগাযোগ করে ঘটনাস্থল থেকে কুমারখালী থানা পুলিশ এবং স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে আমাদের উদ্ধার করেন। আমরা সবাই গুরুতর আহত হওয়ায় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিই।
সংবাদ পেয়ে উদ্ধারে আসা কালকিনি উপজেলার সাদিপুর গ্রামের কাশেম সর্দারের ছেলে লিপু সর্দার(৩৫) বলেন, শুক্রবার রাতেই আমি কুষ্টিয়া এসে পৌছায়। এলাকা থেকেই যোগাযোগ করে আসা ভেড়ামারা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ ভাইয়ের সাথে দেখা করি ভোড়ামারা বারো মাইল বালুঘাটে। সেখানে একটি অফিসে বসে যারা নদীতে সব ছিনিয়ে নিয়েছিলো তাদের ডেকে এনে তাদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল এবং ১৪শ টাকা উদ্ধার করে দেন। ছিনিয়ে নেয়া অন্যান্য মালামাল শনিবারের মধ্যে ফেরত দেয়ার কথা রয়েছে। শর্ত হিসেবে কোন মামলা না করার কথা বলেছেন সোহাগ ভাই। তবে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ আমাদের একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে ভেড়ামারা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সামান্য একটু ভুলবুঝাবুঝির কারণে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। “মেসার্স ব্লেজ ইন ট্রেড” নামে আমাদের ইজারা প্রতিষ্ঠানের লোকজন গোয়ালন্দ থেকে পাকশী পর্যন্ত নৌ চ্যানেলের খাজনা তুলে। ওরা কোন চোর ডাকাত নয়। ওরা ভুল করে এসব করেছে। তাছাড়া ভুক্তভোগীরা আমার এখানে এসেছিলো, আমি তাদের ঝামেলা মিটিয়ে দিয়েছি।
এবিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি(তদন্ত) নিশিকান্ত দাস জানান, গত শুক্রবার পদ্মা নদীতে ফেরিওয়ালাদের ঢোপ বোঝাই নৌকাতে খাজনা চাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিলো। সেগুলি নাকি তারা নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছে; ছিনিয়ে নেয়া মালামালও ফেরত দেয়ার কথা আছে বলে শুনেছি। তবে এবিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি। তাছাড়া ঘটনাস্থলটি কুমারখালী থানার মধ্যে হওয়ায় আমরা এরচেয়ে বেশী কিছু জানিনা।
কুমারখালী থানার ওসি মজিবর রহমান জানান, নৌকাতে হামলা মারধর বা ছিনতায়ের কোন ঘটনা আমার জানা নেই বা কেউ এমন অভিযোগ নিয়ে থানায় আসেনি।
দেশতথ্য//এল//
Leave a Reply