কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
‘পুঁজিবাদী শোষণ, ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, বিরাষ্ট্রীয়করণ, নারীনির্যাতন ও ধর্ষণ রুখে দাঁড়াও’ আহ্বানে বাসদ এর ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও মহান রুশ বিপ্লবের ১০৩তম বার্ষিকী পালন করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ কুষ্টিয়া জেলা শাখা।
শনিবার বিকেল ৪টায় কুষ্টিয়া শহরের কাষ্টম মোড়স্থ দলীয় কার্যালয় হতে দলীয় ও লাল পতাকা ধারণ করে ব্যানার ফেস্টুন প্লাকার্ড সজ্জিত একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে সমাবেশ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কুষ্টিয়া জেলা বাসদের আহ্বায়ক কমরেড শফিউর রহমান শফির সভাপতিত্বে এবং শ্রমিক ফ্রন্ট নেতা কমরেড আশরাফুল ইসলাম’র পরিচালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- বাসদ সদস্য সচিব মাসুদ হাসান, বাসদ নেতা এ্যাড. মীর নাজমুল ইসলাম শাহীন, জেলা ফোরামের সদস্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি লাবনী সুলতানা প্রমুখ।
এসময় নেতৃবৃন্দ বলেন, ৪০ বছর আগে দেশের মেহনতি শ্রমজীবী মানুষের শোষণমুক্তির প্রত্যয় নিয়ে যে সংগ্রামী যাত্রা শুরু হয়েছিলো সেই পথ চলতে গিয়ে দলটিকে বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সীমাহিন ঘাত-প্রতিঘাত, প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে চলতে হচ্ছে। শুরুতেই দেশের সামরিক শাসন ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন, জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। একই ভাবে শিক্ষা আন্দোলন, বিপ্লবী ধারার ট্রেড ইউনিয়ন সংগ্রামের পাশাপাশি, চাষি অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তুলেছে সংগ্রামী ভাবধারায়। সেই সাথে পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রমিক শ্রেণির কাছে আরও একটি স্মরণীয় দিন আজকের ৭নভেম্বর। ১০৩ বছর আগে ১৯১৭ সালের এই দিনে রাশিয়ায় মহান লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক পার্টির শ্রমিক বিপ্লব সংগঠিত করেছিল। যে বিপ্লবে দুনিয়ায় প্রথম শ্রমিকশ্রেণি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে সমাজতন্ত্র কায়েম করেছিল। সভ্য দুনিয়ায় এটি ছিলো এক অবিস্মরণীয় ঘটনার উল্লম্ফন। যেখানে ব্যক্তি মালিকানার উচ্ছেদ ঘটিয়ে সকল নাগরিকের ভাত, কাপড়, শিক্ষা, চিকিৎসা, কাজ ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠ্ াপেয়েছিলো। সমাজ থেকে ভিক্ষুক, বেকার দূর করেছিল। নারী-পুরুষের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছিল। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, খেলাধুলায় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের উন্নয়ন গোটা পুঁজিবাদী দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিল। অথচ আজ গোটা দুনিয়া ভয়াবহ করোনা মহামারিতে ক্ষতবিক্ষত। এতে যেমন মানুষের মৃত্যু ঘটছে, একই ভাবে অর্থনৈতিক সংকটও ভয়াবহরূপ নিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চলছে ছাঁটাই, লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হচ্ছে, বেকারত্ব, দারিদ্র বাড়ছে। বাড়ছে দুর্নীতি, নারীর উপর সহিংসতা-ধর্ষণ, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু, সবজিসহ সকল নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন নাভিশ^াস। নিয়ন্ত্রনহীন বেপরোয়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে গোটা দেশ জিম্মি। ভোটাধিকারের মতো নাগরিক জীবনের মৌল অধিকারও ভুলুন্ঠিত। সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম-দুর্নীতি আজ নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট এবং সরকারের গণবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে যাতে কোন গণআন্দোলন গড়ে না উঠতে পারে তার জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে কালো আইনে জনগণকে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে কারাগারে পুরছে। নারীর উপর সহিংসতা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বহুগুণে বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১২/১৫টি ধর্ষণ, নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে অথচ এসব খুন, ধর্ষণ, নির্যাতনের প্রায় কোন বিচারই হয় না। বিচারহীনতার যে রেওয়াজ তৈরি হয়েছে তাতে নারী ধর্ষণ, যৌনহয়রানি বেড়ে চলছে। এমন সংকটময় পরিস্থিতি ও নিষ্পেষিত সাধারণ নাগরিক জীবনের পরিত্রাণে শোষনমুক্তির সংগ্রামকে শক্তিশালী করতে যেসব দবি তলে ধরা হয়েছে সেগুলি হলো- ক্সচাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আদা, আলুসহ নিত্যপণ্য এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ-ডিজেলের দাম কমাও; বাজার ক্সনিয়ন্ত্রণ কর, সিন্ডিকেট ভাঙো; গ্রাম-শহরে রেশনিং ব্যবস্থা চালু কর। নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যা বন্ধ কর; বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা দূর কর; ধর্ষক ও তার পৃষ্ঠপোষকদের ক্সসর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত কর; নারীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার সংগ্রাম জোরদার কর। বন্ধ পাটকল চালু ও আধুনিকায়ন কর; পাট, চিনিকলসহ শিল্প কারখানা বিরাষ্ট্রীয়করণ বন্ধ কর; বাসদ ক্সনেতা জনার্দন দত্ত নান্টু, এস এ রশীদ, মোজাম্মেল হক, মিজানুর রহমান বাবুসহ গ্রেফতারকৃত পাটকল রক্ষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাও; মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার কর। দুর্নীতি লুটপাট বন্ধ কর; ব্যাংক ডাকাত, ঋণখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও বিচার কর; ক্সআয়ের সাথে সঙ্গতিহীন সম্পদ বাজেয়াপ্ত কর। হিসাব দিতে পারবে না যে, সম্পদের মালিক থাকবে না সে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত কর; সকলের করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা বিনামূল্যে করতে হবে; সরকারি ক্সহাসপাতালের সংখ্যা, শয্যা, চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মী বাড়াও। ওষুধের দাম কমাও, ভেজাল ও মেয়াদোত্তির্ণ ওষুধ বিক্রয়কারীদের শাস্তি দাও। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত কর; ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালো আইন বাতিল কর ক্সডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দাও। কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ বাড়াও। বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কর। সকল শ্রেণি পেশার ক্সমানুষের ন্যায়সংগত দাবি মেনে নাও। মালিকানা নির্বিশেষে সর্বনিম্ন জাতীয় মজুরি ১৮ হাজার টাকা নির্ধারণ কর। শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ কর ক্সভোট ডাকাতির সংসদ বাতিল কর; সরকার পদত্যাগ কর; দ্রুত গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন দাও।
দেশতথ্য//এল//
Leave a Reply